Now Reading
ঋজু বিপ্লব: অথবা মানুষ কেন সোজা হাঁটে

ঋজু বিপ্লব: অথবা মানুষ কেন সোজা হাঁটে


—রূপসা নাগ

Rupsa Nag

Bangla

বহুকাল আগে, মানুষ, আর সকল চারপেয়ে পশুর মতই হাটতো—হাত, পা উভয়ের সাহায্যে। খরগোশ, চিতাবাঘ বা গণ্ডারের তুলনায় মানুষ ছিলো বেশি দ্রুত। হাত আর পা, দেহের বাকি সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চেয়ে একে অপরের কাছাকাছি ছিলো। তাদের জোড়গুলি ছিলো এক রকম: কাঁধ আর কোমর; কনুই আর হাঁটু; গোড়ালি আর কবজি; হাত আর পা, যাদের শেষে পাঁচটা করে আঙুল আর প্রত্যেকটি আঙুলের উপর নখ। দুই হাত পায়েরই পাঁচ আঙুলের নকশা, বুড়ো আঙুল থেকে কড়ে আঙুল অবধি, ছিলো এক ধরণের। তখনকার দিনে হাতের বুড়ো আঙুল ঠিক পায়ের বুড়ো আঙুলের মত বাকি আঙুলগুলোর আরও কাছে ঘেঁষে থাকতো। হাত আর পা একে অপরকে ডাকতো সোদর বলে।

শরীর যখন যেখানে যেতে চাইতো, ওরা নিয়ে যেত; বাজারহাট, দোকানপাট, বন-বাদাড় পেরিয়ে পাহাড়ের চরাই-উতরাই, অর্থাৎ যেখানেই চলাফেরা করার প্রয়োজন। জলের তলায় ওরা একসাথে শরীরকে ভাসতে, সাঁতরাতে, ডুব দিতে সাহায্য করতো। ওদের সম্পর্ক ছিলো সমান এবং গণতান্ত্রিক। দরকার মত শরীরের বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সৃষ্টিগুলোকেও কাজে লাগাতো ওরা; যেমন ধরো মুখের শব্দ, কানের শ্রবণ, নাকের ঘ্রাণ বা চোখের দৃষ্টি।

ওদের এই অবিরল ছন্দের সহযোগিতা দেখে বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গদের ভারি হিংসে হতো। নিজেদের বিশেষ প্রতিভা এই সহোদরদের সাথে ভাগ করে নিতে হতো বলে ওরা সদাই তিতিবিরক্ত। হিংসের জ্বালায় মত্ত হয়ে ওরা ভুলেই গেলো যে হাত আর পা’ই ওদের সব জায়গায় নিয়ে যায় আর ওরা তাদেরই বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটতে বসলো।

জিভ, মগজের তৈরি একখানা মতলব ধার করে, অবিলম্বে কাজে লাগিয়ে হাত আর পায়ের আপেক্ষিক শক্তি সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করতে লাগলো জোর গলায়—কে বেশি শক্তিশালী? এই দুই সহোদর, যারা কোনদিন একে অপরের ক্ষমতা বা কার কি আছে তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি, এইবার মুখের শব্দ ধার নিয়ে দাবি করলো যে তারা বাকিদের চেয়ে বেশি জরুরি। খুব শিগ্গির কথা বাঁক নিলো কে বেশি মার্জিত তাই নিয়ে; হাত নিজের সরু, লম্বা আঙুলের বড়াইয়ের পাশাপাশি পায়ের ছোট, মোটা আঙুল নিয়ে উপহাস করতে লাগলো। পায়ের আঙুল কি আর তাতে দমে থাকে? সে হাতের পাতলা আঙুলগুলোকে না খেতে পাওয়া তুতো ভাইবোন বলে ব্যাঙ্গ করতে লাগলো। এভাবেই ঝগড়াঝাঁটি করে কেটে গেলো অনেকদিন; আর এতে ওদের নিখুঁত কাজের খানিক ছন্দপতনও ঘটলো বটে। অবশেষে প্রশ্ন উঠলো ক্ষমতা নিয়ে; এইবার তারা সালিশির জন্যে গেলো বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গদের কাছে।

জিভ একটি প্রতিযোগিতার পরামর্শ দিলো। দুর্দান্ত, সবাই তাতে রাজি। কিন্তু কিসের? কেউ বললো হাত আর পায়ের মধ্যে কুস্তি হোক। অন্যেরা বললো তলওয়ারবাজি, ভেল্কিবাজি, দৌড় কিম্বা দাবা জাতীয় খেলা; কিন্তু এই সকল খেলাই হয় হাত অথবা পায়ের প্রতি অন্যায্য বলে নামঞ্জুর হলো। ফের একবার, জিভ, মগজের ভাবনা ধার করে এক সহজ সমাধান বার করলো। শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-সমষ্টি একে একে, একটি করে পরীক্ষা নিয়ে আসবে। হাত আর পা রাজি।

বনের খোলা প্রান্তে, নদীর ধারে প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হলো। সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আসন্ন কোনও দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে এক্কেবারে সজাগ, পাছে শরীর ঘাবড়ে যায়; কারণ এখন ওদের লড়াই নিজেদের মধ্যে। চোখ, যতদূর দেখা যায়, খুঁটিয়ে দেখে নিলো যাতে তুচ্ছতম বিপদও তার আড়াল না হয়; নাক তার নাসারন্ধ্র ঝেড়ে পরিষ্কার করলো যাতে কোনও বিপদের গন্ধ চোখ বা কান কে এড়ালেও নাক থেকে রেহাই না পায়; আর জিভ প্রস্তুত হলো যেকোনো সময় চিৎকার পাড়তে—বিপদ!

বাতাস খবর ছড়িয়ে দিলো হাওয়ায়, জলে, বনের চার কোণে। সবার প্রথমে হাজির হলো চারপেয়ে পশুরা। তাদের মধ্যে বড় যারা, তারা শান্তির প্রতীক হিসেবে সবুজ ডাল নিয়ে উপস্থিত হলো। ওই রঙিন ঝাঁকে দেখা গেলো চিতাবাঘ, সিংহ, গণ্ডার, গোবাঘ, হাতি, জিরাফ, উট, লম্বা-সিংওয়ালা গরু আর ছোট-সিংওয়ালা মোষ, সারং, হরিণ, খরগোশ, ছুঁচো আর ইঁদুরকে। জলের পশু জলহস্তি, মাছ, কুমীর এসে নিজেদের শরীরের উপরের ভাগ নদীতীরে আর বাকিটা জলের তলায় রেখে বসলো। দু-পেয়েরা, যেমন উটপাখি, বনমোরগ আর ময়ূর উত্তেজনায় ডানা ঝাপটাতে লাগলো; পাখিরা গাছে বসে কিচিরমিচির ডাকতে লাগলো; ঝিঁঝি পোকাও গান ধরলো। আর মাকড়শা, কেঁচো, কেন্নো হেঁটে বেড়াতে লাগলো মাটিতে বা গাছে গাছে। সতর্ক গিরগিটি চুপিসারে অবিচলিত হয়ে হাঁটতে লাগলো আর অস্থির টিকটিকি অনবরত এদিক থেকে ওদিক দৌড়তে লাগলো। বাঁদর, শিম্পাঞ্জি, গোরিলা ডালে ডালে লাফিয়ে বেড়ালো। গাছপালা আর ঝাড়গুলোও মৃদুভাবে দুলে দুলে মাথা নুইয়ে সকলকে প্রণাম জানিয়ে নিজেদের জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়ালো।

মুখ একটি গান দিয়ে প্রতিযোগিতা আরম্ভ করলো—

এই আমাদের আনন্দ ভাই

এই আমাদের আনন্দ 

এই আমাদের আনন্দ

আমরা এই প্রকৃতির সন্ততি তাই 

এই আমাদের আনন্দ।

হাত আর পা উভয়েই পণ করলো যে এই প্রতিযোগিতার পরিণাম তারা মাথা পেতে নেবে; কোন গোল না বাঁধিয়ে, বন্ধ বা ধর্মঘটের হুমকি বা ধীরে-চলো নীতির শরণ ছাড়াই।

পায়ের প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাত, একটা কাঠের টুকরো ছুঁড়ে দিলো মাটিতে। পা’কে বাঁ, ডান কিম্বা দুই পা একসাথে ব্যবহার করে এই টুকরো তুলে ছুঁড়তে হবে। প্রতিযোগিতার যেকোনো সময় দুই পা একে অপরের পরামর্শ নিতে পারবে আর দরকার মত সব আঙুল আলাদা-আলাদা করে বা একসাথে ব্যবহার করতে পারবে। পা ওই কাঠের টুকরো উল্টে দেওয়ার, ঠেলার, সব রকম প্রচেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই ঠিক ভাবে তুলতে পারলো না। তোলা তো দূরে থাক, কেবলমাত্র লাথি মেরে খানিক দূর ঠেললো, ব্যাস। এই দেখে হাতের আঙুল মুখের আওয়াজ ধার করে হেসেই খুন। হাত, যে কিনা চ্যালেঞ্জার, সাড়ম্বরে নিজের সুগঠিত, ছিপছিপে চেহারার প্রদর্শনী শুরু করলো যেন এ কোনো সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা। তারপর কাঠের টুকরোটাকে নানাভাবে তুলে দূর বনে ছুঁড়ে দিলো, যা দেখে আহ্লাদে আটখানা দর্শকবৃন্দ ও প্রতিযোগীরা মুগ্ধ হয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো। হাত আরও কীর্তিকলাপ দেখাতে লাগলো—এক বাটি চালের ভেতর থেকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বালির কণা তুলে দেখালো, সূচে সুতো পরালো, ভারি কাঠ বওয়ার ছোটো ছোটো কপিকল বানালো, বর্শা-বল্লম বানিয়ে দূরে ছুঁড়ে দেখালো; এমন সব কীর্তি যা পায়ের আঙুলের কাছে স্বপ্ন মাত্র। পা ওখানে বসে তার ছিপছিপে সহোদরের দক্ষতা আর নমনীয়তা দেখে বিস্মিত হলো। দর্শকবৃন্দের হাতগুলো, তাদের বন্ধু হাতের প্রশংসায় ও সমর্থনে সজোরে হাততালি দিতে লাগলো যা দেখে পায়ের বড় কষ্ট হলো। তবু পা হার মানলো না, খানিক কাঁচুমাচু হয়ে বসে থেকে বুড়ো আঙুল দিয়ে বালির উপর ছোট ছোট গোল আঁকতে আঁকতে সে হাতের জন্য কোনো বাজিমাত করা চ্যালেঞ্জের কথা ভাবতে লাগলো।

শেষমেশ চ্যালেঞ্জ ছোঁড়ার পালা এলো পায়ের। পা বললো তার চ্যালেঞ্জ সহজ। হাত গোটা শরীরকে বৃত্তের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে তুলে নিয়ে যাবে। কি বোকাবোকা চ্যালেঞ্জ,  ভাবলো হাতের অহংকারী আঙুলেরা। সে এক দেখার মত দৃশ্য ছিলো। সমস্ত শরীর উল্টে পাল্টে গেলো। হাত ঠেকলো মাটিতে, চোখগুলো মাটির এত কাছে যে তাদের দৃষ্টিকোণ মারাত্মক সীমিত হয়ে গেলো; নাকে ঢুকলো ধুলো আর সে মারলো হাঁচি; পা তার আঙুলদের নিয়ে ভাসলো হাওয়ায়—দর্শকেরা চিৎকার করে গাইতে লাগলো, 

ন্যাও জু !

ন্যাও ন্যাও জু

হাকুনা মাটাটা

ফুয়াটা ন্যাও

হাকুনা মাটাটা

তুরুকেনি আঙ্গানি

তবে তাদের নজর স্থির ছিলো হাতের উপর। এই হাত যে কিছুক্ষণ আগেও অবিশ্বাস্য পটুতা প্রদর্শন করছিলো, এখন এক চুলও নড়তে পারলোনা। কয়েক হাত এগোতে না এগোতেই, ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো আর টলমলে বাহু কেঁপে শরীর গেলো পড়ে। খানিক বিশ্রাম নিয়ে তারা ফের চেষ্টা করলো। এইবার তারা আঙুলদের বিস্তৃত করে আরও শক্ত হাতে মাটিকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করলো তবে বুড়ো আঙুল বাদে কাউকে টানা গেলনা। তারা ডিগবাজি খেতে চেষ্টা করলো কিন্তু সেটি অগ্রাহ্য করা হল কারণ একটা সম্পূর্ণ ডিগবাজির খেতে পায়ের প্রয়োজন হয়। এইবার পায়ের আঙুলের হাসার পালা। গলার সবচেয়ে গম্ভীর স্বর মুখের থেকে ধার করে পায়ের আঙুল হাতের আঙুলের সরু, কুঁইকুঁই শব্দের হাসির এক্কেবারে বিপরীত এক অট্টহাস্য হাসলো। এই অপমান শুনে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে হাত শেষবারের মত শরীরকে তোলবার এক মরিয়া চেষ্টা করলো। এক ধাপও এগোতে পারলো না। হাত ও তার আঙুল ক্লান্ত হয়ে অবশেষে হাল ছাড়লো। এইবার মজা পেয়ে পা নিজের ক্রীড়াবিদ্যা দেখাতে লাগলো—সময় মাপা, দুলকি চাল, দৌড়, লাফ, লং জাম্প ইত্যাদি প্রদর্শন করলো। শরীরকে একবারের জন্যেও পড়ে যেতে দিলোনা। দর্শকদের পা অনুমোদনে ও সমর্থনে মাটির উপর দাপাদাপি করতে লাগলো। হাত তখন অনায়াসে ভুলে গিয়ে যে সেই এই খেলার প্রবর্তক, পায়ের অখেলোয়াড়অঙ্গসুলভ আচরণের প্রতিবাদ করবার জন্যে হাত তুললো।

তবে দর্শকেরা হাতের ব্যাপারে খানিক অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করলো—শরীরকে তোলার জন্য বুড়ো আঙুলগুলোকে বেদম টান মারায় সে বাকি আঙুলদের থেকে দূরে, আলাদাই হয়ে গেলো। এই দেখে বিপক্ষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গেরা হাসতে শুরুই করবে এমন সময় তারা আরও লক্ষ্য করলো যে বিচ্ছিন্ন বুড়ো আঙুলের জন্য হাতের দক্ষতা বাড়লো বই কমলোনা, ওদের আঁকড়ে, চেপে, জাপটে ধরার শক্তি গেলো বেড়ে! একি! বিকৃতি রূপান্তরিত হলো কৃতি শক্তিতে!

প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ঠিক করা নিয়ে বিতর্ক চললো পায়ের ও হাতের পাঁচ আঙুল-মাফিক পাঁচ দিন ধরে। শত চেষ্টা করেও কেউ নিশ্চিত ভাবে কোন বিজয়ী ঘোষণা করতে পারল না; নিজনিজ কাজের ক্ষেত্রে হাত ও পা দুজনেই উৎকৃষ্ট; একজনের অপরজনকে ছাড়া চলে না। এই ঘোর বিপদকালে শুরু হল এক দার্শনিক চর্চা—শরীর আসলে কি, সবাই জিজ্ঞেস করলো, আর বুঝতে পারলো যে তাদের সব্বাইকে মিলিয়েই এই শরীর; একে অপরের সাথে তারা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। দেহের প্রত্যেকটি অঙ্গ সুষ্ঠভাবে কাজ করতে পারলে তবেই অন্যেরাও ভালোভাবে কাজ করবে।

তবে ভবিষ্যতে এমন প্রতিযোগিতা এড়াতে, যাতে কেউ কারুর জন্য বাধা  না হয়ে  দাঁড়াতে পারে, সব অঙ্গেরা মিলে ঠিক করলো যে শরীর এখন থেকে আকাশপানে হাত তুলে দিয়ে আর মাটিতে দৃঢ় পা রেখে, সোজা হয়ে হাঁটবে। শরীর এই সিদ্ধান্তে বেজায় খুশী হলো, তবে ঠিক করলো যে ছোটদের চার পায়ে হামা দেওয়ার অনুমতি থাকবে যাতে তারা নিজেদের শিকড় ভুলে না যায়। কাজের ভার ভাগ করা হলো—পা শরীরকে বহন করবে, তবে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর হাতকে জিনিসপত্র ধরা, বানানো এই সমস্ত কাজ করতে হবে। বহন করার গুরুভার পায়ের বলে হাত হাত বাড়ালো প্রকৃতির সকল কাজ করতে যাতে মুখের কাছে খাবার পৌঁছায়। মুখের ভেতর দাঁত সেই খাবার চিবিয়ে পৌঁছে দেবে পেটের কাছে। পেট তার সমস্ত পুষ্টি নিংড়ে, শরীরের নহরপথগুলো দিয়ে পৌঁছে ঢেলে দেবে শরীরের কোণায় কোণায়। হজমের পর পেট বাকিটা নিয়ে যাবে শরীরের নিকাশি ব্যবস্থায় যেখান থেকে শরীর খোলা মাঠে তাকে বর্জন করবে বা মাটির নীচে পুঁতে দেবে যাতে মাটি উর্বর হয়ে ওঠে। গাছ গজাবে, সেই গাছে ফল ধরবে; হাত সেই ফল পেড়ে মুখে পুরবে। হ্যাঁ ঠিক ধরেছো, জীবনের চাকা।

খেলাধুলো ও বিনোদনও ভাগ করা হলো সেইভাবে—গান, হাসাহাসি, কথা বলার ভার মুখের; দৌড় আর ফুটবল পায়ের; বেসবল আর বাস্কেটবল হাতের তবে সেখানে পায়ের কাজ দৌড়ানো। ক্রীড়ার প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রটাই পায়ের জন্যে বরাদ্দ ছিলো। শ্রমের এই স্পষ্ট বিভাজন মানব দেহকে এক ভীষণ জীবযন্তরে পরিণত করলো, যে কিনা পরিমাণ ও মান অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রাণীদেরও ছাপিয়ে গেলো।

তবু দেহের অঙ্গেরা ঠিক বুঝলো যে এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তও দ্বন্দ্ব ঘটাতে পারে। সবার উপরে বলে মাথা নিজেকে মাটিতে ঠেকানো পায়ের চেয়ে উচ্চতর ভাবতে পারে যেন সে মালিক আর তার নীচে সকল অঙ্গেরা, দাস। মাথা এবং মাথার নীচের সমস্ত অঙ্গেরা যে ক্ষমতার দিক থেকে সমান, এই সত্যের ওপর তারা বিশেষ  জোর দিলো। আর এই বিষয়টি সবার দৃষ্টিগোচর করতে অঙ্গেরা নিশ্চিত করলো যে এক অঙ্গের ব্যাথা বা আনন্দ বাকি সমস্ত অঙ্গ অনুভব করতে পারবে। তারা মুখকে সতর্ক করলো, ‘আমার এটা, আমার ওটা’ বলবার সময় নিজেকে একমাত্র মালিক হিসেবে না দেখিয়ে সে যেন গোটা শরীরের কথা বলে।

তারা গান ধরলো— 

এই দেহে কেউ নই ক্রীতদাস

এই দেহে কেউ দাস নই

আমরা সবাই কাজের সাথী

আমাদেরই জন্য আমরা

আমরা একে অপরের করি সেবা

আমাদেরই জন্য আমরা

আমরা একে অপরের করি সেবা

জিভ আমাদের কণ্ঠ

তুমি আমায় ধরো আমি তোমায় ধরি

ঐক্যবদ্ধ হয়ে সুস্বাস্থ্য গড়ি

একসাথে করি কাজ

সুস্থ শরীরের তরে

একসাথে করি কাজ

সুস্থ শরীরের তরে

ঐক্য আমাদের শক্তি।

এইটেই হয়ে দাঁড়ালো মানব দেহের স্তবগাথা। আজও শরীর এই গানটিই গায় আর এই গানই পার্থক্য বুঝিয়ে দেয় মানুষ ও অন্যান্য পশুদের মধ্যে, যারা ঋজু বিপ্লবকে খারিজ করেছিলো।

চারপেয়েরা এই বিপ্লব দেখা সত্ত্বেও কোনমতেই এর অংশীদার হয়নি। গান-টান করা তাদের কাছে উপহাস্য। মুখের কাজ খাওয়া, গাওয়া নয়। তারা প্রকৃতির রক্ষণশীল দল গঠন করলো আর কোনদিনই নিজেদের অভ্যাস পরিবর্তন করলোনা।

মানুষ তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গদের থেকে শিক্ষা নিতে পারলে সফল হয়। কিন্তু, একজন আরেকজনের উপরে আছে বলে,  মাথা আর শরীরকে যুদ্ধরত শত্রুর মত দেখলে তারা তাদের সেই তুতো ভাইবোনদের মত হয়ে যায় যারা ঋজু বিপ্লবকে খারিজ করেছিলো।


Rupsa Nag completed her M.A. in Comparative Literature from Jadavpur University as of 2019. Her interests lie in writing, editing, translation, research and performing arts. She participated in various translation workshops and projects with the Centre for Translation of Indian Literatures (CENTIL). She was part of Writing Places (2017 and 2018), a creative writing and literary translation project that is a partnership between the National Centre for Writing, the University of East Anglia, the British Centre for Translation (BCLT), the Kolkata Literary Meet, Seagull Books and CENTIL, Jadavpur University. Two of her poems ‘Almost Human’ and ‘Dance’ have been published in the Writing Places Anthology, 2019. As a recipient of the Sahapedia UNESCO Fellowship 2019, she published her research module, Chamba Rumal: The Embroidery Art of Himachal Pradesh. She has also authored pieces on menstrual health awareness for the Indian youth media platform, Youth Ki Awaaz’s #PeriodPaath programme, 2020.

What's Your Reaction?
Excited
0
Happy
0
In Love
0
Not Sure
0
Silly
0
Scroll To Top

Discover more from Jalada Africa

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading